শেখ মোস্তফা কামাল,কেশবপুর(যশোর): যশোরের কেশবপুরে “সংগ্রাম-স্বাধীনতা, প্রেরণায় বঙ্গমাতা” এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এঁর ৯৩তম জন্মবার্ষিকী পালিত হয়েছে। কেশবপুর উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা কার্যালয়ের সহযোগিতায় নানা কর্মসূচীর মধ্যে ৮ আগষ্ট (মঙ্গলবার) সকাল ১০ ঘটিকায় উপজেলা পরিষদ চত্তরে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এঁর অস্থায়ী প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।

পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব এঁর স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল, সেলাই মেশিন বিতরণ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম এম আরাফাত হোসেন সভাপতিত্ব করেন।

উপজেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা বিমল কুমার কুন্ডু’র সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) মোঃ আরিফুজ্জামান, উপজেলা কৃষি অফিসার মাহমুদা আক্তার, কেশবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ মফিজুর রহমান, উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নাসিমা সাদেক চম্পা, কেশবপুর সরকারি পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মছিহুর রহমান, বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম তৌহিদুজ্জামান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বাবু তপন কুমার ঘোষ মন্টু।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুপালী রানী।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, বাঙালি জাতির আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামের প্রতিটি পদক্ষেপে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয়ভাবে সহযোগিতা করেছেন। বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব একজন সাধারণ বাঙালি নারী হয়েও স্বামী-সংসার, আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর দেশ পুর্নগঠনে তিনি ব্যাপক ভূমিকা রেখে গেছেন। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক কারণে কারাগারে থাকার পরেও বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব সাহসের সাথে পরিবার ও দলকে সুসংগঠিত করে সঠিক পথে পরিচালিত করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সাফল্যের পিছনে বঙ্গমাতার অবদান ছিলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে দোয়া মাহফিল পরিচালনা করেন উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা আব্দুর রহমান।

দোয়া মাহফিল শেষে কর্মসংস্থানের সৃষ্টির লক্ষে অসহায় মহিলাদের মাঝে সেলাই মেশিন বিতরণ ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করা হয়।

এসময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সমাজসেবা অফিসার আলমগীর হোসেন, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা পুলোক কুমার সিকদার, উপজেলা সহকারী প্রোগ্রামার আব্দুস সামাদ, উপজেলা আনসার ও ভিডিপি কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) দেবাশীষ দাশ, ন্যাশনাল প্রেস সোসাইটি, গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থা কেশবপুর উপজেলা শাখার সভাপতি শামীম আখতার মুকুলসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ, মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ছাত্র-ছাত্রীবৃন্দ।

উল্লেখ্য, বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব ১৯৩০ সালে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার ডাকনাম ছিল রেনু। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পিতা-মাতা হারান তিনি। তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের চাচাতো বোন ছিলেন। শেখ মুজিবের বয়স যখন ১৩ বছর ও বেগম ফজিলাতুন নেছা’র বয়স মাত্র ৩ বছর তখনই পরিবারের লোকজন তাদের বিয়ে ঠিক করে রাখেন। পরবর্তীতে ১৯৩৮ সালে বিয়ে শেখ মুজিবুর এবং ফজিলাতুন নেছার বিবাহ সম্পন্ন হয়। তাদের দাম্পত্য জীবনে দুই কন্যা ও তিন ছেলে সন্তান হয়। তারা হলেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল।
১৯৭৫ সালের ­­­১৫ই আগস্ট ঢাকার ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধুর বাসায় একদল নিম্নপদস্থ সেনা কর্মকর্তারা আক্রমণ চালিয়ে বর্ষণের মতো গুলি করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিবকে নির্মমভাবে হত্যা করে। হত্যা করে ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু পুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী কামাল, ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণি। বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে আসা কর্নেল জামিল উদ্দীন নিহত হন। দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা। এই নির্মম হত্যাকাণ্ড বাংলার ইতিহাসে এক কলঙ্কিত বর্বরোচিত অধ্যায়।